1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

ধর্ষণ ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর অভিযোগ

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১
  • ৭৩২ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: ধর্ষণ ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর অভিযোগ না নিতে সম্প্রতি দেশের একজন বিচারকের দেওয়া পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অপরাধ কখনও পুরনো হয়ে যায় না। ভুক্তভোগী চাইলে যেকোনও সময় অভিযোগ সামনে আনতে পারেন।

ন্যায়বিচার নিশ্চিতকারী বিশ্বের সামনের সারির কয়েকটি দেশের থ্রি-ইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোথাও অভিযোগ দায়েরের জন্য সময় বেঁধে দেওয়ার কোনও নজির নেই। সেসব দেশের আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ২৪-৭২ ঘণ্টার উল্লেখ থাকলেও অভিযোগ দায়েরে সময় বেঁধে দেওয়া নেই।

দেশের আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, যৌন হয়রানি বা যৌন সহিংসতার অভিযোগ একদশক পরেও তোলা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ‘মিটু’ হ্যাশট্যাগ আন্দোলনই এর বড় প্রমাণ।

কেন অভিযোগ করতে সময় বেঁধে দেওয়া যায় না

ধর্ষণের শিকার নারী অনেক কারণেই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ দায়ের নাও করতে পারেন। এমনকি অনেকে জানেনই না ধর্ষণের শিকার হলে কীভাবে সাহস নিয়ে এগোতে হবে। তাছাড়া শারীরিক এবং মানসিক ধকল সামাল দিতে অধিকাংশ নারীর সময়ের প্রয়োজন। সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার বিষয়টি তো বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এ কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত থাকে ভুক্তভোগী এবং তার পরিবার বিষয়টি প্রকাশ করতে চায় না– এমন নজিরও অনেক।

মেডিক্যাল পরীক্ষা একমাত্র পথ নয়

ধর্ষণের ঘটনায় ২৪-৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল পরীক্ষার কথা বলা হয়, কেননা তাতে অপরাধ সহজে প্রমাণ করতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর আইন বিশ্লেষকরা তাদের নানান গবেষণায় দেখিয়েছেন, ফরেনসিকে নিষ্পত্তি না হওয়া মামলা পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দিয়ে কীভাবে প্রমাণ করা যায়। সেজন্য ঘটনার শিকার ব্যক্তি যখন স্বস্তি বোধ করেন তখনই নথিভুক্ত করতে পারা জরুরি।

উই ক্যান-এর সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে অপরাধের ধারাবাহিকতা সাজিয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে আদালতের সামনে উপস্থাপন করার কাজটি কঠিন বলে সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেতে চায় না। কেবল মেডিক্যাল পরীক্ষাকেই একমাত্র উপায় ধরে এগোয় তারা। কেননা পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য জোড়া দিয়ে মামলা প্রমাণে পুলিশকে অনেক দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়।’

যুক্তরাষ্ট্র

গোটা আমেরিকায় ধর্ষণ ঘটনায় অভিযোগ দায়েরের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। কিন্তু ভুক্তভোগী কতদিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে সেই সময় নির্ধারণ করা আছে। অভিযুক্তের অপরাধ ও অভিযোগের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে ধর্ষণ ঘটনার পরবর্তী সময় সীমাবদ্ধতার বিধির মধ্যে বলা আছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ১০-২০ বছর পর্যন্ত অভিযোগ করা যেতে পারে।

নিউ ইয়র্ক

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের একটি নতুন আইন ‘শিশু ভিক্টিমস অ্যাক্ট’। এর মাধ্যমে যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের জন্য অভিযোগ জানাতে ২৮ বছর বয়স পর্যন্ত যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আরও বেশি সময় পাওয়া যেতে পারে। আইনটি অভিযুক্ত অপরাধী বা অবহেলাকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য ভুক্তভোগীদের সময় দেয়।

কলম্বিয়া

২০১৯ সালে ২০টি রাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় যে ক্যাথলিক চার্চ কয়েক দশক ধরে যৌন নির্যাতন অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে, তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও আইন সংস্কার করেছে। সেখানে কতদিনের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করা যাবে সেই উল্লেখ নেই। তবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভুক্তভোগীর মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্নের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ আছে।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে সীমাবদ্ধতার আইন নেই। যদি ভুক্তভোগী কথা বলতে বা ধর্ষণের প্রমাণ প্রকাশে কয়েক দশক সময় নেয়, তবুও ঐতিহাসিক যৌন অপরাধের জন্য অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে।

কানাডা

কানাডায় যৌন নিপীড়নের জন্য ফৌজদারি অভিযোগ আনার কোনও সময়সীমা নেই। এর অর্থ নিপীড়নের শিকার ভুক্তভোগী জীবনের যেকোনও সময়ে একটি ফৌজদারি অভিযোগ এবং সিভিল অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি মারা গেলে ফৌজদারি আদালত সেই অভিযোগ নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না।

ডেনমার্ক

দেশটির আইন বলছে, ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর মর্যাদা একজন সাক্ষীর মতো, তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার পক্ষ নন। মামলার তদন্ত ও বিচারিক পরিচালনার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। একজন সাক্ষী হিসেবে নারীর মর্যাদা মানে হলো যে, তাকে অবশ্যই তদন্তে অংশগ্রহণ করতে হবে এবং মিথ্যাচারের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। নারীর পক্ষে নারী আইনজীবী বিবৃতি দিতে, অভিযুক্তকে প্রশ্ন করতে বা অন্য কোনও উপায়ে মামলায় অংশ নিতে পারবেন না। আইনজীবী প্রসিকিউটরকে অতিরিক্ত প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করতে পারেন, তবে কোন প্রমাণটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে সেই সিদ্ধান্ত একাই নেন প্রসিকিউটর।

সুইডেন

পাবলিক প্রসিকিউটর দিয়ে জনসাধারণের পক্ষে অর্থাৎ সমাজের পক্ষে ভুক্তভোগী ব্যতীত অন্য ব্যক্তিরা একটি ধর্ষণ অপরাধের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে। পুলিশ এমন সব অপরাধ তদন্ত করতে বাধ্য যা পাবলিক প্রসিকিউশনের অধীন, এমনকি যদি অভিযোগকারীর আপত্তি থাকে একটি তদন্তে তবুও। প্রসিকিউটরের বিচার করার নিরঙ্কুশ দায়িত্ব রয়েছে; অর্থাৎ আইনি প্রক্রিয়া চালু করার বাধ্যবাধকতা যদি তিনি মূল্যায়ন করেন যে, মামলায় প্রমাণ পর্যাপ্ত রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা

নিকোল লেভেনস্টাইন এবং আদারস বনাম দ্য এস্টেট অব লেট সিডনি লুইস ফ্র্যাঙ্কেল এবং অন্যান্যদের ক্ষেত্রে আদালতের একটি রায় আছে। মামলাটি প্রাথমিকভাবে আট জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলা আবেদনকারীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে তোলা হয়েছিল, যারা সত্তর দশকে মি. সিডনি ফ্রাঙ্কেলের হাতে শিশু হিসেবে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিল। সেই সময় তারা অভিযোগ করতে পারেনি। আবেদনকারীরা হাইকোর্টে অভিযোগ করে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের জুন মাসে সফল হয়েছিল।

ভারত

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলায় সময় সীমাবদ্ধতার কথা কোনও আইনে নেই। বরং যেহেতু ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ, তাই উল্লেখ আছে– সময়সীমার কথা বলে রিপোর্ট করাকে বাধা দেওয়া যাবে না। তবে সবক্ষেত্রেই মেডিক্যাল পরীক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা সম্পাদনের কথা বলা হয়ে থাকে।

সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুরের আইনজীবীরী বলছেন– মনে রাখবেন, ঘটনার পুলিশ রিপোর্ট করবেন কিনা বা কখন করবেন তা আপনার পছন্দ। ভুক্তভোগী যদি রিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়, তিনি যত আগে রিপোর্ট করবেন, পুলিশের পক্ষে তদন্ত করা এবং অপরাধীকে বিচার করা তত সহজ হবে। কিন্তু তাই বলে কোনও সময় বেঁধে দেওয়া নেই। ঘটনার পর যেকোনও সময় পুলিশি রিপোর্ট করতে পারার সুযোগ আছে, তা যতদিনই হোক না কেন। রিপোর্ট পেলেই পুলিশ তদন্ত করতে বাধ্য থাকবে।

চীন

চীনে সামাজিক হেনস্তার শঙ্কায় ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার অভিযোগ দায়ের কম হয়। চীনে ধর্ষণের ঘটনাগুলো তদন্ত করা প্রায়ই কঠিন কারণ কিছু পুলিশ অফিসার, আইনজীবী, জনসাধারণের সদস্য এবং অপরাধীরা ধর্ষণ অপরাধে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করার মনোভাব পোষণ করে।

এক গবেষক প্রকৃত তথ্য তুলে আনতে অনানুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ অফিসার, আইনজীবী এবং শিক্ষকসহ কয়েকজন পেশাদারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলছেন, ‘আমি কেন বিষয়টি অন্বেষণ করতে চাই তা নিয়ে কেউ কেউ বিভ্রান্ত ছিল। কারণ তারা মনে করেছিল যে, ধর্ষণ তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। সাক্ষাৎকার নেওয়া ব্যক্তিদের একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে, একটি ধর্ষণের ঘটনা নিষ্পত্তির জন্য সাধারণত দুটি প্রধান উপায় রয়েছে: এটি প্রকাশ্যে রিপোর্ট করা (উদাহরণস্বরূপ, জননিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কাছে বা আদালতে) বা ব্যক্তিগতভাবে এটি নিষ্পত্তি করা (আলোচনা বা নীরবতা বজায় রাখার মাধ্যমে)। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী পরেরটি বেছে নেয়, তাই ধর্ষণের ঘটনাগুলো পরিচালনার কাজ প্রায়ই চুপচাপ থাকে।’

মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে সময়ের বাধানিষেধ কতটা যৌক্তিক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আদালত সাজা দেয়। ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অপরাধীর সাজা দেওয়া সহজ হয়ে যায় বলে মনে করা হয় বলেই দ্রুততম সময়ে সেটি সম্পাদনের কথা বলা হয়। তবে আইনের দৃষ্টিতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং প্রমাণ বলে একটি বিষয় রয়েছে। এর মাধ্যমেও অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব। সেই বিবেচনায় সময় বেঁধে দেওয়ার কোনও অর্থ হয় না।’

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..